Monday, March 2, 2015

বিলাইছড়ি উপজেলায় সর্বপ্রকার উন্নয়নের কার্যক্রম সম্প্রসারণ

বিলাইছড়ি উপজেলার জনসাধারণের ‍জীবনযাত্রা, শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কৃষি তথা সকল ধরণের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তিন দিনের সফরে গেলেন মাননীয় সংসদ সদস্য বাবু ঊষাতন তালুকদার এম.পি । গত ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ ইং তারিখ তিনি এই সফর আরম্ভ করেন । তাঁর এই দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর সফরে সফরসঙ্গী ছিলেন বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু শুভ মঙ্গল চাকমা, বিলাইছড়ি স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা:মো:কামরুল হাসান , তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী তয়েন চাকমা ও অন্যান্য সফরসঙ্গীগণ । তিনি বিলাইছড়ি সদর উপজেলা, পাংখোয়া পাড়া, তক্তানালা, ফারুয়া, যমুনাছড়ি, কেংড়াছড়ি, ও কেংড়াছড়ি বাজার এলাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, চেয়ারম্যান, হেডম্যান, কার্বারী ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এলাকার জনগণের সাথে মত বিনিময় করে তাঁদের সুখ-দুঃখ, সুবিধা-অসুবিধার কথ‍া জানতে চান । এসময় যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিজাত দ্রব্য যথাসময়ে বাজারজাতকরণ সম্ভব হয় না বলে, যাতায়াতের সুবিধার্থে ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে বোটের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণের এবং গাড়ী চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরীর দাবী করেন সেখানকার মানুষ। এবং নেটওয়ার্কের আওতায় না থাকা এলাকাগুলোতে নেটওয়ার্ক বা মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করে এলাকাবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এম.পি মহোদয়কে অনুরোধ জানান । সাধারণ মানুষের সাথে আলাপ-আলোচনা ও মতামত আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিলাইছড়ি উপজেলার অবস্থা জানা যায় । সেখানে ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় স্কুল কলেজের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য । আর যে অল্প কয়েকটি স্কুল আছে সেগুলোর বেশীরভাগই এখনও রেজিস্টারকৃত করা সম্ভব হয় নি এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই । 
বিলাইছড়ি উপজেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকার্জনের মাধ্যম হল কৃষি । এই কৃষিকাজ করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন । বিশেষ করে কাপ্তাই-হ্রদের পানি ঠিক সময়ে না কমা এবং ন‍া বাড়ার কারণে জলে ভাসা জমিগুলোতে চাষ করা খুবই জটিল হয়ে পড়ে । বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকার মানুষ অনেক সময় চিকিৎসার সুযোগ থকে বঞ্চিত হয় । সেখানে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকাই এর প্রধান কারন । এসকল সমস্যার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও জানতে চান সেখানকার সাধারণ মানুষ । বাবু ঊষাতন তালুকদার সকল এলাকার (ফারুয়া,তক্তানালা,যমুনাছড়ি,পাংখোয়া পাড়া, কেংড়াছড়ি,কেংড়াছড়ি বাজার) জনগণের অভাব-অভিযোগ,ও সুখ-দুঃখের কথা মনযোগ সহকারে শুনেন এবং তাঁর উন্নয়ন কর্যক্রমের ধাপসমূহ তাদের কাছে তুলে ধরেন । তিঁনি তাঁর বক্তব্যে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন তথা ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির জন্য বোটের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ,বিলাইছড়ি সদর উপজেলায় পাকা রাস্তা তৈরী,এবং আলিহং থেকে ফারুয়া পর্যন্ত মোটরসাইকেল ও জীপ গাড়ী চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলা সহ আরো অনেক উন্নয়ন করা হবে বলে জানান । 

জনসাধারণের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন । সবার জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে স্কুল কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ,শিক্ষক নিয়োগ,ছাত্রাবাস স্থাপন,শিক্ষা সামগ্রী ও ল্যাপটপ কম্পিউটার বিতরণ, বিদ্যালয় রেজিস্টারকরণ সহ ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অবশ্যই করবেন বলে প্রকাশ করেন । সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ,জাতি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য তিনি অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী ও উপস্থিত সকলকে আহ্বান জানান । যেহেতু বিলাইছড়ি উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল তাই তিঁনি কৃষকদের যথাযতভাবে ট্রেনিং করানোর জন্য কৃষিকর্মকর্তদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন । এছাড়াও পানি সেচের জন্য পাওয়ার টিলার ও পাওয়ার পাম্প প্রদান এবং জলেভাসা জমিগুলোর চাষাবাদ করতে সঠিক সময়ে পানি উঠাতে ও নামাতে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন বলে দৃঢ় আশ্বাস দেন । আরও ‍উন্নতমানের ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে হাইব্রিড বীজ পার্বত্য এলাকায় আমদানি করার কথাও তিনি প্রকাশ করেন । 

“স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল “। তাই সকল স্তরের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় স্থ‍ানে স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলেন । আর তাঁর সফরসঙ্গী ডা:মো: কামরুল হাসানের পরামর্শ নিয়ে বিনামূল্যে ঔষধ নেওয়ার জন্য বলেন । শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে এবং তিনি সংসদের ভিতরে ও বাইরে সবসময় কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন । তবে “নানা মুনির নানা্ মত “ থাকার কারণে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে বলে সেখানকার জনসাধারণকে বলেন । এবিষয়ে সবাইকে একতাবদ্ধ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিঁনি। সবশেষে বিলাইছড়ি এলাকার মানুষ এই শুষ্ক মৌসুমে কষ্ট করে তাদের খোঁজ-খবর নিতে আসার জন্য এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানান এবং এই দিনগুলি তাদের জীবনে স্বরণীয় হয়ে থাকবে বলেও প্রকাশ করেন । অবশেষে সাংসদ ঊষাতন তালুকদার তক্তানালা লাইব্রেরীর উন্নয়ন ও বই ক্রয়ের জন্য এবং যমুনাছড়ির গির্জাগুলোর উন্নয়নের জন্য নগদ অর্থ প্রদান করে সকলের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ জীবন কামনা করে বিদায় নেন ।

No comments:

Post a Comment